বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল ॥ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের স্বাক্ষর জাল করে জেলার আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেখিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের অভিযোগে ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা সৈয়দ মিলন হাদিসুর রহমান মিলনসহ ১২ জনের নামে মামলা হয়েছে।
জেলা যুবলীগের সদস্য মো. মাসুম সিকদার বাদী হয়ে শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাতে এ মামলাটি করেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেছেন, গত ৬ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি যুবলীগ নেতা সৈয়দ মিলন হাদিসুর রহমান মিলন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের একটি ভুয়া প্যাড ও সিলমোহর তৈরি করে তাতে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিলের স্বাক্ষর জাল করে ২২ সদস্যের জেলা যুবলীগের একটি মিথ্যা কমিটি সাজিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। জেলা যুবলীগের সদস্য হিসেবে এ ঘটনা জানতে চাইলে মিলনসহ মামলার অন্য অভিযুক্তরা মো. মাসুম সিকদারসহ তার কয়েকজন সহযোগীকে দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখান ও মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন সরকার জানান, মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম জাকির বলেন, ২০১২ সালে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি লিয়াকত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আমাকে (রেজাউল করিম জাকির) যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের কমিটি অনুমোদন দেয়। পরে লিয়াকত ভাই এক নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে দলীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আর তার কিছু দিন পর থেকে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগে আমাকে আহ্বায়ক ও কামাল শরীফকে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দলীয় কার্যক্রম পালন করার জন্য কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ভাবে চিঠিপত্র দেয়া হচ্ছে। আর সে কারণে আমি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে দলীয় কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি।
এদিকে গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া যুবলীগের ওই কমিটিতে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের রেজাউল করিম জাকিরকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদে সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলনের নাম দেখা যায়। ২২ সদস্যের ওই কমিটিতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিলের নামসহ স্বাক্ষর দেখানো হয়। আর তা ফেসবুকে ছড়িয়েও পড়ে। এরপর এ মামলাটি দায়ের হয়।
তবে এ ঘটনার পর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দফতর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন শাহাজাদা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায় জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া যুবলীগের ওই কমিটি মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ঝালকাঠি জেলা শাখার কোন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিলের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যুবলীগের কমিটি নিয়ে গুজব ও অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণও করেন।
তবে এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি যুবলীগ নেতা সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলন বলেন, আসলে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের বৈধ কমিটি হলো- লিয়াকত হোসেন আহ্বায়ক ও রেজাউল করিম জাকির যুগ্ম আহ্বায়ক। এরপর আর যুবলীগের কোন নতুন কমিটি ঘোষণা হয়নি। একটি চক্র ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের মিথ্যা পদ পদবী ব্যবহার করে আসছে। তারা আমাকে রাজনৈতিক ভাবে দমন করার জন্য আমার নাম ব্যবহার করে এমন ভুয়া একটি নতুন কমিটি প্রচার করে এই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। পূর্বেও রাজনৈতিক এই প্রতিপক্ষটি আমাকে বিভিন্ন মামলায় জেল খাটায়। তবে সবগুলো মামলা থেকেই আমি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি আমার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেই স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি যে, এই ভুয়া তথ্যের সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত নই। এ ঘটনার প্রতিবাদও জানিয়েছি। এরপরও মামলা দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক তা স্পষ্ট।
তিনি আরও বলেন, মামলায় যে মারধরের কথা বলা হয়েছে, তা সিসি ক্যামেরা চেক করলেই সত্যের প্রমাণ মিলবে।
এসব মামলা হামলা বা ষড়যন্ত্র করে দলের কার্যক্রম থেকে আমাকে কোন ভাবেই দমিয়ে রাখা যাবে না, বলেন সাবেক এ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি।