বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল॥ বরিশাল সদর থেকে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা ও ভোলা জেলার সরাসরি সড়কপথে যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপন হয়নি আজো। তাই নদীপথেই এ জনপদের মানুষ যাতায়াত করে থাকে।
এক্ষেত্রে লঞ্চ প্রধান বাহন হলেও সময় স্বল্পতার কারণে স্পিডবোটেও যাতায়াত করেন বিপুল সংখ্যক যাত্রী।
তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম এ রুটের লঞ্চগুলোতে যেমন থাকে না, তেমনি স্পিডবোটগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বরং দ্রুতগতির যান হওয়ায় যে ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিশেষ করে লাইফ জ্যাকেট থাকার কথা তা বেশিরভাগ স্পিডবোটেই দেখা যায় না।
বরিশাল-ভোলা রুটের নিয়মিত যাত্রী ও বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরিরত হুমায়ুন কবির বলেন, স্বল্প সময়ে বরিশাল থেকে ভোলা পৌঁছাতে স্পিডবোটের রুট জনপ্রিয়। তবে এ রুটের বোটগুলো যেমন পুরাতন, তেমনি বেশিরভাগ চালকই অনভিজ্ঞ। প্রায়ই ইঞ্জিন বিকল হয়ে মাঝ নদীতে উৎকণ্ঠা নিয়ে ভেসে থাকতে হয় যাত্রীদের। আবার যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য দায়সারা কিছু সরঞ্জাম রাখা হয় স্পিডবোটগুলোতে। কিন্তু সেগুলোও ব্যবহারেই নেই কোনো উদ্যোগ।
তিনি বলেন, স্পিডবোটে লাইফ সেফটি হিসেবে জ্যাকেট থাকে, তবে দেখা যায় ১০ জন যাত্রী হলে আটটি থাকে। আবার যাত্রীদের হলে চালকের নেই। তবে বেশিরভাগ জ্যাকেটই খুব পুরাতন নয়তো বিভিন্ন অংশ নষ্ট থাকে। যা দুর্ঘটনার সময় কাজেই লাগে না।
গত ৫ ডিসেম্বের বরিশাল-ভোলা রুটে দুর্ঘটনায় এ অবধি চালকসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের কারও শরীরে লাইফ জ্যাকেটের কোনো অস্তিত্ব দেখা যায়নি।
নিহত একজনের স্বজন মো. শরিফুল ইসলাম বলছেন, লাইফ জ্যাকেটটা শরীরে থাকলে অন্তত দুর্ঘটনার ঘটার পর তাৎক্ষণিক পানির ওপরে ভেসে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। আর তাতে প্রাণে রক্ষাও হয়তো পেত সবাই। কিন্তু চালকসহ মৃত কোনো ব্যক্তির শরীরে লাইফ জ্যাকেট ছিল না। আর তাই মৃত্যুর পরও মরদেহ পেতে দু-দিন সময় লাগলো।
তিনি বলেন, এ রুটটি টিকে থাকা উচিত। কারণ বরিশালের সঙ্গে ভোলার একমাত্র সহজ যোগাযোগব্যবস্থা এটি। তবে অবৈধ ও অনিরাপদ স্পিডবোটগুলো বাদ দিয়ে দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিতের পাশাপাশি একটি নীতিমালার মধ্য দিয়ে বোট চালনার ওপর জোর দেওয়া উচিত বিআইডব্লিউটিএর।
যদিও এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি। তবে নৌ পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম হিসেবে ঘাট ত্যাগের পূর্বে বোটগুলোতে লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করা হয়। সেই সঙ্গে সন্ধ্যার পরে বোট চালনা বন্ধ রাখাসহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ে চালক ও শ্রমিকদের সতর্ক করা হয়ে থাকে।
তবে অনেক যাত্রী লাইফ জ্যাকেট পরিধান করতে অনীহা প্রকাশ করে বলে জানিয়েছেন বোট চালকরা। তারা বলছেন, গরম লাগাসহ নানান অজুহাতে যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট থাকলেও পরিধান করতে চান না। আর এ নিয়ে জোর দিলে চালকের সঙ্গে অশোভন আচরণও করেন অনেক যাত্রী।
আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্পিডবোটের গতি নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।