• ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ , ৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

বরিশালে চেয়ারম্যানের বাধায় পিছু হটলো পুলিশ !

বিডিক্রাইম
প্রকাশিত আগস্ট ৬, ২০২২, ১৫:৩৭ অপরাহ্ণ
বরিশালে চেয়ারম্যানের বাধায় পিছু হটলো পুলিশ !

বরিশাল প্রতিনিধি \ বরিশালের চরমোনাইয়ে গ্যাসবাহী পিকাপ চাপায় ছয় বছরের এক শিশু নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও তার লোকদের বাধার মুখে ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক পিকাপ ও চালককে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

যদিও পুলিশ বলছে ঘটনাস্থলে পিকাপ ও চালককে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চরমোনাই ইউনিয়নের
ডিংগামানিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটলেও ওই দিন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নগরীর দপদপিয়া টোলঘর এলাকা থেকে ঘাতক পিকাপটি আটক করতে সমর্থ হয় কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ। এ সময় পিকাপের চালক ও গ্যাসের সেলসম্যানকে আটক করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, রাত ৮টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে নিহত শিশু রবিউল (৬) এর লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেম করার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চরমোনাই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ডিংগামানিক এলাকায় শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গ্যাসবাহী একটি পিকাপ (নাম্বার প্লেটবিহীন) রবিউল (৬) নামের এক শিশুকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় শিশুটির। এ সময় স্থানীয়রা ঘাতক পিকাপসহ চালক নয়ন হাওলাদার (১৭) এবং গ্যাসের সেলসম্যান সবুজকে আটক করে।

 

খবর পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ জিয়াউল করিমের লোকজন ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সালাম এসে আটককৃতদের তাদের জিম্মায় নিয়ে আটকে রাখে। এ সময় গ্যাসের ডিলারের সাথে বিষয়টি রফাদফা করার চেষ্টা করেন।

রাত ৮টার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরে কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মাহাবুব, এএসআই জিয়া ও এএসআই হুমায়ুন সংগীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।

ঘটনাস্থল থেকে শিশু রবিউলের মরদেহ উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসলেও চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডারবাহিনীর বাধার মুখে ঘাতক পিকাপ বা চালককে আটক করতে পারেনি তারা।

কোতয়ালী মডেল থানার এসআই মাহাবুব জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী শিশুটির মরদেহ উদ্ধার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
আসামী আটকের জন্য অপর একটি টিম কাজ করেছে। সেখানে কি ঘটেছে তা তিনি জানেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান জিয়াউল ঘাতক পিকাপ ও তার চালককে পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে উল্টো পুলিশকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেয়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে খালি হাতেই ফিরে আসে পুলিশ। তবে বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে আসামীদের পাওয়া যায়নি।

 

তবে চেয়ারম্যান তাদেরকে সহযোগিতা করেননি বলে স্বীকার করেন তিনি। ওসি আরো বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে। এদিকে চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ জিয়াউল করিম পুলিশী কাজে বাধা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি গতকাল ঢাকায় ছিলেন।

 

মুঠোফোনে তিনি স্থানীয় মেম্বার সালামসহ অন্যান্যদেরকে পুলিশের কাছে আসামীদের সোপর্দ করার জন্য বলেন। তবে ঢাকায় এখন আর যেতে আসতে সময় লাগেনা উল্লেখ করে মেম্বার সালাম বলেন, চেয়ারম্যান সন্ধ্যায় তার দরবারে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, নিহত শিশুর পরিবারের লোকজন পোস্টমর্টেম করতে চাননি।

স্থানীয় যুবকরা দেড় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে বিষয়টি সমাধান করেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, শিশু রবিউলের পরিবারের কাছে ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার দায়িত্ব স্থানীয় এক ব্যাক্তি নিয়েছেন। যদিও সেই ব্যাক্তির নাম পরিচয় তিনি বলেননি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ২টা) নিহত শিশু রবিউলের মরদেহ শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।