শয্যার পাঁচ গুণ রোগী। একটি শয্যাও খালি নেই। পানি ও ফ্যান নেই। টয়লেটের পানি ফ্লোর গড়িয়ে আসছে রোগীর বিছানায়। রয়েছে চিকিৎসক সংকট। এর মধ্যেই প্রতিদিন জ্বর-ঠান্ডা, ডায়রিয়া, ডেঙ্গুসহ নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগী। রোগীদের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসক ও নার্সদের। এ চিত্র বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের।
অন্যদিকে হাসপাতালের নতুন ভবনে দুটি লিফট থাকলেও তা নিয়মিত চলছে না। অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ডেঙ্গুর সিবিসি টেস্টের রিএজেন্ট, আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ একাধিক যন্ত্র। প্রয়োজনীয় ওষুধ না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে রোগী ও স্বজনের।
পুলিশ লাইন এলাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত তানজিলা রহমান নিশার স্বামী রাসেল মাহমুদ জানান, হাসপাতালের অবস্থা দেখে স্ত্রীকে ভর্তি করেছি বেসরকারি ক্লিনিকে। সেখানে খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা। বাধ্য হয়ে বাসায় চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বরগুনার প্রায় ১২ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল এ হাসপাতাল। ১০০ শয্যা থেকে উন্নীত করে ২৫০ শয্যা করা হলেও বাড়েনি অবকাঠামো অথবা জনবল। এমনকি ১০০ শয্যার জনবলের রয়েছে এক-চতুর্থাংশ। নেই মেডিসিন, সার্জারি ও কার্ডিওলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের চিকিৎসক। ১০ জন সিনিয়র কনসালট্যান্টের মধ্যে একজন, ১১ জন জুনিয়র কনসালট্যান্টের মধ্যে চারজন এবং ২৮ জন মেডিকেল অফিসারের পদে কর্মরত আছে মাত্র পাঁচজন। এ ছাড়া নার্সসহ একাধিক পদে রয়েছে ভয়াবহ জনবল সংকট।
রোববার সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৬৫ জন রোগী। তাদের মধ্যে ১৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। ফ্লোর, বারান্দায় বিছানা পেতে আছে রোগীরা। টয়লেটের পানি গড়িয়ে আসছে বিছানায়। পর্যাপ্ত ফ্যান না থাকায় প্রচণ্ড তাপদাহে ছটফট করছে তারা। টয়লেটগুলোর সামনে রোগী এবং স্বজনের দীর্ঘ লাইন। এ সময় নানা ক্ষোভের কথা জানায় রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আব্দুল খালেক বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার ঘণ্টাও পানি পাই না। অজু, গোসল দূরের কথা; টয়লেটে যাওয়ার পানিও নেই। সিট না পেয়ে মেঝেতে চাদর পেতে কোনোভাবে আছি। খাবার পানির জন্য একটা টিউবওয়েল আছে, সেটা দিয়ে ঠিকভাবে পানি ওঠে না।
ষাটোর্ধ্ব রিজিয়া বেগম বলেন, ‘মোরা দুই টাহা (টাকা) বাঁচানোর লাইগ্গা সরকারি হাসপাতালে আইছি (আসছি), এহোন (এখন) ওষুধ পাই না, খাবার দেয় কোনো রহম। সব মোগো কিন্না খাওয়া লাগে, তাহলে সরকারি হাসপাতালে আইছ ক্যা?’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. লোকমান হাকিম বলেন, পাম্পের সমস্যার কারণে পানি পেতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ফ্যানসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সমস্যার বিষয়ে তিনি গণপূর্ত বিভাগের ওপর দায় চাপান।
বরগুনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত বিশ্বাস বলেন, ফ্যান কিনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া হয়েছে। পানিসহ অন্যান্য সমস্যাও নিরসনের চেষ্টা চলছে।