বিডি ক্রাইম ডেস্ক, বরিশাল॥ পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট আর বেডের অভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেড় লাখেরও বেশি মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে একের পর এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের জটিলতার কারণে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। ২০২২ সাল নৌ থেকে পার্শ্ববর্তী অপর একটি জরাজীর্ণ ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় একই বেডে দুই রোগী, ফ্লোর ও করিডোরে চলছে চিকিৎসা।
অবস্থার নিরিখে এলাকার সংসদ সদস্য নিজস্ব অর্থায়নে ওই অস্থায়ী ভবনের উপড়ে দেওয়াল করে (টিন শেড) বর্ধিত করে দিচ্ছেন। সংকটের মধ্যে চিকিৎসা, জরুরি সেবা, ভর্তি রোগী রাখা ও অফিশিয়াল কার্যকলাপ চলার পাশাপাশি ১৪ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র তিনজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুজন সাহা জানান, কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনের সামনে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ঠিকাদার নিয়োগ দিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
পিলার ঢালাই ও সামান্য গাঁথুনি কাজ করে ঠিকাদার ৭ থেকে ৮ বছর কাজ বন্ধ রাখেন। এরপর বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি, মানববন্ধন, আবেদন নিবেদনের পর ওই ঠিকাদারকে কার্যাদেশ বাতিল করে তাকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হয়।
অতঃপর ২০২২ পুনরায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ পুনরায় টেন্ডার দিলে ২৫ কোটি ১১ লাখ (অধিক) টাকায় কাজ পায় কহিনুর এন্টারপ্রাইজ। ওই বছরই মূল ভবন ভেঙে ফেলেন ঠিকাদার।
তিনি ২০২৩ সালে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। ওই ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ শেষ না করায় ও কাজের অগ্রগতি না থাকায় কার্যাদেশ বাতিল করে কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আদালতের আশ্রয় নিলে প্রায় ৬ মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
ডা. সুজন সাহা বলেন, ২০২২ সাল থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টাফ কোয়ার্টারে চিকিৎসাসেবা ও অফিসিয়াল কাজ চালানো হচ্ছে পাশের একটি ভবনে ভর্তি রোগীদের রাখা হচ্ছে। স্থান সংকুলান না হওয়া একই বেডে একাধিক রোগী, ফ্লোরে করিডোরে রোগী রেখে অমানবিকভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে এ বিষয়টি এলাকার সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন মহারাজকে জানানো হলে তিনি নিজের অর্থ ব্যয়ে ওই ভবনের ছাদের ওপড় একটি টিন শেড নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডা. সুজন সাহা বলেন, এ কমপ্লেক্সে তিনি ছাড়াও ১৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে মাত্র তিনজন চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে একজনকে সরকারি কাজে বা প্রশিক্ষণের জন্য সেবা দিতে পারেন না। সুতরাং মাত্র দুজন চিকিৎসক দিয়ে উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের সেবা দেওয়া কতটা কঠিন তা ভেবে দেখার জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলে কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী হাফিজা বেগম (৪৫) বলেন, কাউখালীতে মাত্র একটি হাসপাতাল তার অবস্থা এতই নাজুক যে একই বেডে দুই জন করে রোগী থাকতে হয়। হাসপাতালে ডাক্তারও নাই, আমি অসুস্থ হইছি কোথায় চিকিৎসা নিমু কোথায় যামু, গরিব মানুষ তাই আমাগো যাওয়ার জায়গা ও নাই। বাধ্য হইয়া এখানেই থাকতে হইতাছে।
কাউখালীতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সদর ইউনিয়নের মজিবর রহমান জানান, হাসপাতালের অবস্থা এতই করুণ যে, ডাক্তার নাই। তারপরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় দু’টি কক্ষের ভিতরে ২ থেকে ৩ জন চিকিৎসক প্রতিদিন শত শত রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। চিকিৎসকদেরও চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সুজন সাহা বলেন, অস্থায়ী ভবনে ঝুঁকির ভিতরে আমরা চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি। ডাক্তার সংকট থাকার কারণে চিকিৎসা সেবায় কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। রোগীদের সিটের অভাবে অনেক সময় একই বেডে একাধিক রোগী থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মিজানুর রহমান বলেন, কাউখালীতে ভবন সমস্যা ও চিকিৎসক সংকট রয়েছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।