ঝালকাঠির নলছিটি পৌর এলাকায় দখল-দূষণ ও ভরাটের কারণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে সাতটি খাল। এসব খালের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে সেমিপাকা ও কাঁচা দোকানপাট, রাস্তা, বাড়িঘর। কোথাও কোথাও খালের জায়গা ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইট-বালুর খলা ও পাকা স্থাপনা। এসব খালের প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অস্তিত্ব সংকটে থাকা খালগুলো হচ্ছে– কুদের খাল, দুটি খাসমহল নালা খাল, তামাকপট্টি খাল, খোজাখালী সূর্যপাশা খাল, কাণ্ডপাশা খাল ও সারদল সূর্যপাশা খাল। জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, জেলা পরিষদের মালিকানাধীন খালের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক দোকানপাট, পাকা বাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। শুধু দখলেই শেষ নয়, শত শত বাসাবাড়ির বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে এসব খালে। ফলে খালগুলো থেকে রোগ-জীবাণু ছাড়াচ্ছে। এ ছাড়া পরিণত হয়েছে মশা-মাছির অভয়ারণ্যে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কুদের খালটি পৌরসভার পুরাতন বাজারের জেলা পরিষদ ডাকবাংলো হয়ে মল্লিকপুর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। এই খালের বুকে বিভিন্ন দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাকা পিলার বসিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। খাসমহল নালা খাল দুটি পৌরসভার সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনসাধারণের পয়ঃনিষ্কাশনের সুবিধার্থে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু নালা খালের জায়গা দখল করে বাসাবাড়ি নির্মাণ ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাটের কারণে মরতে বসেছে এ খাল। কয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটু ভারী বর্ষণ হলেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
এদিকে বাঁধ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে পৌরসভার খোঁজাখালী জেলা পরিষদের খাল। সুগন্ধা নদীর সঙ্গে সংযোগ বন্ধ করে গড়ে তোলা হয়েছে ২০টির মতো মুদি, মনোহারিসহ হোটেল ও চায়ের দোকান। চার-পাঁচজন বালু ব্যবসায়ী নির্মাণ করেছেন বাঁধ। ফাঁকা যেটুকু ছিল তাতেও খুঁটি গাড়তে দেখা গেছে দখলদারদের। বাঁধ নির্মাণের কারণে সূর্যপাশা গ্রামের কৃষকরা সেচের পানি পাচ্ছেন না। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাণ্ডপাশা এলাকার নলছিটি-বরিশাল আঞ্চলিক সড়কের পাশে কাণ্ডপাশা খাল। এ খালের এক পাশ দখল করে বিভিন্ন দোকান ও ব্যক্তিমালিকানাধীন অফিসঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে ধুঁকছে সারদল সূর্যপাশা খালটি। একই পরিস্থিতি পৌরসভার ফেরিঘাট এলাকার বধ্যভূমি থেকে থানার সামনে প্রর্যন্ত তামাকপট্টি খালের। ময়লা-আবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে এ খাল। এ ছাড়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঋষিবাড়ি-মালিপুর খালটি বিলীন হয়ে গেছে। ১৫ থেকে ২০ বছর আগে এ খাল দৃশ্যমান থাকলেও এখন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
খোজাখালী গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, খালের পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় জমির উর্বরতা কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনও কমে গেছে। আগের দিনে আমাদের এসব খালে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখন খালই প্রায় মৃত, মাছ আসবে কীভাবে।
পৌরসভার খাসমহল এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, ভারি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বাড়লে খালের পচা ও দুর্গন্ধময় পানি বাসায় ওঠে। ফলে বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখ লেগেই আছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকারি খাল বিনা অনুমতিতে একের পর এক দখল করলেও জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এখনই দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বাকি খালগুলোও দ্রুত তাদের দখলে চলে যাবে।
পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মানিক হোসেন দাবি করেন, কাণ্ডপাশা খালের ওপর দোকান নির্মাণ করলেও পানি চলাচলে সমস্যা হয় না।
৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী বলেন, তাঁর নির্বাচনী ওয়ার্ডে খাসমহল এলাকায় দুটি নালা খাল ও ফেরিঘাট এলাকায় তামাকপট্টি নামের একটি খাল রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নালা খাল সংস্কারে টেন্ডার প্রক্রিয়া রয়েছে। কাজ শুরু হলে দখল ও জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।
নলছিটি পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ কবির খান বলেন, খালগুলোর বেশির ভাগ মালিকানা জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অচিরেই দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঝালকাঠি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, জেলা পরিষদের জমিতে কোনো অবৈধ দখলদার থাকতে পারবে না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।