আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: আমতলীর পুজাখোলা গ্রামে তানজিলা নামে এক মাদরাসা ছাত্রীকে অপহনের পর ধর্ষন করে হত্যা করা হয়েছে বলে গ্রেপ্তার কৃত প্রধান আসামী স্বীকার করেছে। এঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে হৃদয়কে প্রধান এবং তার সহযোগী জাহিদুলকে আসামী করে ৩জনকে অজ্ঞাত আসামী করে তানজিলার বাবা তোফাজ্জেল খান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তানজিলার খুনিদের ফাঁসির দাবীতে বৃহস্পতিবার সকালে পুজাখোলা গ্রামের শত শত মানুষ আমতলী শহরে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। জানা গেছে, আমতলী উপজেলার আমতলী সদর ইউনিয়নের পুজাখোলা গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন খান এর মেয়ে ইসলামপুর হাসানিয়া দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ গ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা বেগমকে (১২) গত সোমবার সকালে বাড়ির সামনে থেকে অপহরন করে নিয়ে যায় প্রতিবেশী শহিদুল খানের ছেলে চাচাত ভাই হৃদয় খান ও তার সহযোগী ছোবাহান খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান। পরের দিন মঙ্গলবার হৃদয় খান একটি অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে নিহত তানজিলা বেগমের ভাই ইমরানের মোবাইল ফোনে ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে একটি এসএমএস পাঠায়। এঘটনা জানিয়ে তানজিলার বাবা তোফাজ্জেল খান মঙ্গলবার আমতলী থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। সাধারন ডায়েরীর পর পুলিশ এসএমএস এর সূত্র ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরের দিন বুধবার হৃদয় খানের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে এবং তার সহযোগী জাহিদুলকে পুজাখোলা গ্রাম থেকে আটক করে। আটকের পর জিঞ্জাসাবাদে সে তানজিলাকে হত্যা করে লাশ সোনাউটা খালের পারে পাতাবনে ফেলে রেখেছে বলে জানায়। পুলিশ হৃদয় এবং জাহিদুলের সহযোগিতায় বুধবার দুপুর ১টার সময় বাড়ির সামনে ২০০ গজ দুরে অবস্থিত খালেরপাতাবন থেকে তানজিলার লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় তার হাত এবং পা তানজিলার পরনের জামা দিয়ে বাধা ছিল। গলায় তার ব্যাবহৃত ওড়না পেচানো ছিল। পুলিশ জানায় প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে হৃদয় তানজিলাকে ধর্ষনের পর স্বাস রোধে হত্যার পর লাশ পাতাবনে রেখে চলে আসে বলে স্বীকার করেছে। তানজিলা পুজাখোলা গ্রামের হাসানিয়া দাখিল মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। লেখা পড়ায় সে ভালো ছিল তবে তার মা রেভা বেগম সবসময় অসুস্থ থাকায় সংসারের কাজ তানজিলাকে সামলাতে হত বলে মাদরাসায় অনিয়মিত ছিল। তানজিলার সহপাঠী ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষাথী এলমা ও শিথিলা বেগম জানায় তানজিলা খুব শান্ত এবং ভদ্র সভাবের ছিল কারো সাথে তেমন একটা বেশী কথা বলত না। লেখা পড়ায় সে ভালো ছিল। আবেগ তারিত হয়ে ওই শিক্ষার্থী কান্না জড়িত কন্ঠে জানায় তানজিলা এভাবে খুন হবে আমরা তা কখনো ভাতেও পারি না। তানজিলা প্রিয় প্রতিষ্ঠান ইসলামপুর হাসানিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার শাহ আলম আল মারুফ জানান, আমার প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলাকে হারিয়ে খুব বিমর্ষ। নিষ্পাপ একটি মেয়ে এভাবে খুনের স্বীকার হয়েছে এটা অকল্পনীয়। আমারা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা খুনীদের ফাঁসি দাবী করছি। ভষ্যিতে কেউ যেন এরক ঘটনার সাহস না পায়। পুজাখোলা গ্রামের বাসিন্দা ফোরকান হাওলাদার জানান, হৃদয়খান ও জাহিদুল এলাকায় বখাটে এবং মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত। তারা বিভিন্ন খারাপ কাজের সাথে জড়িত। মাদকাসক্ত হওয়ায় এলাকার মানুষ তাদেরকে ভয় পায়। আমারা এই হত্যার বিচার চাই। তানজিলা খুনের ঘটনায় পুরো পুজাখোলা গ্রাম ফুসে উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই গ্রামের কয়েক শ’ নারী পুরুষ আমতলী শহরের সদর রোডে বিক্ষোভ এবং সদর ইউনিয়ন পরিষদ সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। মানবন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন মো. কাওছার হোসেন,আব্দুল হালিম, নাছিমা বেগম, মিজানুর রহমানসহ অনেকে। পুজাখোলা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. জলিল জানান, হৃদয়, জাহিদুল খুব খারাপ প্রকৃতির লোক সবসময় তারা নেশা করে। তানজিলা খুনের ঘটনায় আমি খুনীদের ফাঁসি চাই। আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, এরকম একটি নিষ্পাপ মেয়েকে যারা হত্যা করতে পারে তারা জাতির দুশমন। আমি ওদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। তানজিলা নিহতের ঘটনায় তার বাবা মো. তোফাজ্জেল হোসেন খান বৃহস্পতিবার সকালে আমতলী থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। হৃদয়কে প্রধান এবং জাহিদুলের নাম দিয়ে ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে তানজিলাকে অপহরনের পর বাড়ির সামনে পাতাবনে নিয়ে ধর্ষনের পর হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে। তিনি আরো বলেন, তানজিলার শরীরে ধর্ষনের আলামত রয়েছে। নিহত তানজিলা বেগমের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন খান জানান, মোর মাইয়াডারে খুন করায় মোর বুকটা খালি অইয়া গেছে। এইরহম আর যেন কোন বাহের বুক খালি না অয়। মুই হৃদয় ও জাহিদুলের ফাঁসি চাই। আর কিছু চাই না। অগো ফাসি অইলে কবরে মোর মাইয়াডায় শান্তি পাইবে। নিহত তানজিলা বেগমের অসুস্থ মা রেবেকা বেগম মেয়েকে হাড়িয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন। বিছানায় শুয়ে অঝোর ধারায় চোখের পানি ফেলছেন আর আহাজারি করছেন আমি অসুস্থ এতেদিন আমর সানা মা তানজিলা আমার দেখাশুনা করত। কে এখন আমাকে দেখা শুনা করবে। কথাগুলো বলছিলেন আর বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। বরগুনায় নিহত তানজিলার ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় তার নিজ বাড়ির সামনে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। জানাযায নিজগ্রামসহ আশপাশ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহন করে। আমতলী আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী শাখয়াত হোসেন তপু বলেন, আটক হৃদয় ও জাহিদুলকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতলী উপজেলা সিননিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী গ্রহন করবেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক।